সিজার পরবর্তী জটিলতা মা ও শিশু কী কী সমস্যায় পড়ে?

সিজারিয়ান (সিজার) সেকশনের পরবর্তী জটিলতাগুলি মায়ের ও শিশুর জন্য বেশ কয়েকটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সিজারিয়ান ডেলিভারি হল একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি যা শিশু জন্মদানের জন্য ব্যবহৃত হয় যখন প্রাকৃতিক প্রসব সম্ভব নয় বা নিরাপদ নয়। যদিও এই পদ্ধতিটি সাধারণত নিরাপদ, তবে এটি কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

১. মায়ের সিজার পরবর্তী জটিলতা

১.১ শারীরিক জটিলতা

  • পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি: সিজারিয়ানের পরে পেটের সেলাইগুলো কিছুটা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • শল্যচিকিৎসার ইনফেকশন: সার্জারি সাইটে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা লালচে, ফুলে যাওয়া, এবং পুঁজ বা ক্ষত থেকে প্রমাণিত হয়।
  • অন্তঃসত্ত্বা বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: গর্ভস্থল সেলাইয়ের সমস্যা বা অন্যান্য কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।

১.২ অন্তর্গত সমস্যাগুলি

  • অন্তঃসত্ত্বার সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, সিজারিয়ান সেকশনের কারণে অন্তঃসত্ত্বার সমস্যা হতে পারে, যেমন মায়ের ভেতরের অঙ্গের সেলাইয়ের সমস্যা।
  • রক্ত চাপের পরিবর্তন: সিজারিয়ানের পর মায়ের রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে।
  • গ্যাসট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: হজমের সমস্যা, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।

১.৩ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

  • ডিপ্রেশন: পোস্টপাটাম ডিপ্রেশন (PPD) সিজারিয়ান সেকশনের পরে মায়েদের মধ্যে সাধারণ হতে পারে, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে।
  • স্ট্রেস ও উদ্বেগ: জন্মের পরবর্তী সময়ে মায়ের মানসিক চাপ বাড়তে পারে, বিশেষত যদি সিজারিয়ানের সময় কোনো জটিলতা ঘটে।

২. শিশুর সিজার পরবর্তী জটিলতা

২.১ শারীরিক জটিলতা

  • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা: সিজারিয়ানের পরে শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে, যা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে।
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া (নিম্ন রক্তে শর্করা): শিশুর রক্তে শর্করার পরিমাণ কম হতে পারে, যা চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে।
  • জন্ডিস: শিশুর ত্বক এবং চোখে হলুদ ভাব দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত লিভার ফাংশনের সমস্যা নির্দেশ করে।

২.২ জন্মগত ত্রুটি

  • নির্দিষ্ট ত্রুটি: সিজারিয়ান সেকশনের ফলে শিশুর কিছু জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে, যদিও এটি সাধারণত অত্যন্ত বিরল।

২.৩ গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত সমস্যা

  • প্রাথমিক ধাপের সমস্যা: শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক দিন সমস্যা হতে পারে, যেমন খাবারের অভাব, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।

৩. সিজার পরবর্তী জটিলতা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা

৩.১ মায়ের যত্ন

  • শল্যচিকিৎসার সেবা: সিজার পরবর্তী সময়ে শল্যচিকিৎসার সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত। ইনফেকশন এড়াতে ও সেলাইয়ের সঠিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত চিকিৎসক দেখানো প্রয়োজন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • ব্যায়াম ও বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

৩.২ শিশুর যত্ন

  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শিশুর জন্মের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। শ্বাস প্রশ্বাস, রক্তে শর্করা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
  • খাবারের যত্ন: শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের দুধ অথবা সঠিক খাবার প্রদান করা উচিত।

৩.৩ মানসিক স্বাস্থ্য

  • মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দিলে, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার

সিজারিয়ান সেকশনের পর মায়ের ও শিশুর জন্য কিছু জটিলতার সম্ভাবনা থাকে, তবে যথাযথ চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এই জটিলতাগুলি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিচর্যা ও মনোযোগ দিয়ে সিজার পরবর্তী সময়কে নিরাপদ ও সুস্থভাবে কাটানো সম্ভব।

Leave a Comment